দীর্ঘদিন পর বাজারে ফিরল প্রাণ, বিনিয়োগকারীদের মাঝে উচ্ছ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে আজ বুধবার (২৩ জুলাই) একটি মাইলফলক দিন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার পর সূচক ও লেনদেনে দেখা গেছে রেকর্ড ছোঁয়ার ঘটনা। বিনিয়োগকারীদের মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি, বাজারে ছিল চাঙাভাব। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি দৃঢ় ইতিবাচক ইঙ্গিত, যা ভবিষ্যতে শেয়ারবাজারকে আরও স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব করে তুলতে পারে।
নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সূচক
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৯৩.৫১ পয়েন্ট, যা প্রায় ১.৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। নতুন এই অবস্থানে সূচক দাঁড়িয়েছে ৫,৩৬৩.৯৪ পয়েন্টে, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ অবস্থানে সূচক ছিল ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর, তখন ডিএসইএক্স ছিল ৫,৩৬৫ পয়েন্টে।
ডিএসইর অন্য দুটি সূচকেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে।
ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ১৬.৮০ পয়েন্ট, অবস্থান করছে ১,১৭৮.৪৫ পয়েন্টে।
ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৫৬.৩১ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ২,০৮৬.৪৭ পয়েন্টে।
রেকর্ড লেনদেন, ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
আজকের দিনে ডিএসইতে মোট ৯৮৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
আগেরদিন (মঙ্গলবার) লেনদেন ছিল ৭২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সেই তুলনায় আজকের লেনদেন বেড়েছে ২৬৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৯৯টি কোম্পানি, যার মধ্যে
২১৮টির দর বেড়েছে,
১০২টির দর কমেছে এবং
৭৯টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও ইতিবাচক প্রবণতা
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-তেও আজ দেখা গেছে চাঙ্গাভাব। এখানে আজ মোট ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগেরদিনের ৬ কোটি ৬১ লাখ টাকার তুলনায় কিছুটা বেশি।
লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৫৩টি কোম্পানি। এর মধ্যে
১৪৬টির দর বেড়েছে,
৭৮টির দর কমেছে,
২৯টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৩৫.০৭ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ১৪,৮৮৯.৫৮ পয়েন্টে। আগেরদিন সূচক বেড়েছিল ৭৮.৪১ পয়েন্ট।
বাজার বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আজকের এই প্রবণতা নিছকই একটি দৈনন্দিন উত্থান নয়, বরং এটি বাজারে পুঁজির প্রবাহ বৃদ্ধির একটি স্পষ্ট বার্তা। তাদের মতে, সাম্প্রতিক মুদ্রানীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারের বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপগুলো বাজারে আস্থা ফেরানোর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শেয়ারে নতুন করে আগ্রহ, কিছু খাতে চমকপ্রদ আয়প্রকাশ এবং দীর্ঘদিন অপেক্ষমাণ বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাজারে এই গতি এনেছে।
তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে শেয়ারবাজার একটি টেকসই ও সুশৃঙ্খল রূপ পাবে, যা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হয়ে উঠবে।
আল-মামুন/